Uncategorized

হাইকোর্টের অভিমত: বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা আনবে ‘বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫

Published

on


জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে ‘বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫’ একটি যুগোপযোগী ও জরুরি পদক্ষেপ — এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ সংক্রান্ত এই অধ্যাদেশের চারটি ধারার বৈধতা নিয়ে করা রিট মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে আদালত এই মন্তব্য করেছেন।

২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা গেজেটের মাধ্যমে “বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫” কার্যকর করা হয়। এই অধ্যাদেশের আওতায় সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগের জন্য একটি স্বতন্ত্র ও নিরপেক্ষ কাউন্সিল — “সুপ্রিম জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল” — গঠনের বিধান রাখা হয়েছে।

কাউন্সিলটি বিচারপতি, অভিজ্ঞ আইনজীবী এবং বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত হবে, যারা রাজনৈতিক প্রভাব ও পক্ষপাতমূলক বিবেচনার বাইরে থেকে বিচারকদের নির্বাচন ও সুপারিশ করবে। এই উদ্যোগটি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

এই অধ্যাদেশের ৩, ৪, ৬ ও ৯ নম্বর ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আজমল হোসেন। তিনি রিটে উল্লেখ করেন, এই ধারা গুলোর মাধ্যমে সাংবিধানিক ক্ষমতার সীমা লঙ্ঘিত হতে পারে।

তবে দীর্ঘ শুনানির পর, গত ২৮ এপ্রিল বিচারপতি নঈমা হায়দার ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিটটি নিষ্পত্তি করেন। আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

আদালত রায়ে উল্লেখ করেন:

  • “বিচার বিভাগ একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”
  • “এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে একটি নিরপেক্ষ নিয়োগ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পাবে, যা বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি করবে।”
  • “এটি রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আহমেদ কবির বলেন, “এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন হলে, বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য হবে। তবে এটি কার্যকর করতে হলে কাউন্সিলের গঠন ও পরিচালনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।”

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান বলেন, “বিচার বিভাগের ওপর জনগণের আস্থা ফেরাতে এমন একটি কাউন্সিল বহু আগে দরকার ছিল। এটি কার্যকর হলে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত বিচারক নিয়োগ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”

হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী, বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ ২০২৫ একটি সাংবিধানিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়িত হলে, বিচার বিভাগের কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

সরকার যদি যথাযথভাবে এই অধ্যাদেশ অনুসরণ করে কাউন্সিল গঠন ও কার্যক্রম পরিচালনা করে, তাহলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ইতিহাসে এটি একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Trending

Exit mobile version